Book Appointment Now
পিত্তথলির পাথর: কারণ, লক্ষণ, এবং চিকিৎসা
পিত্তথলির পাথর, যাকে গলস্টোন (Gallstone) বলা হয়, হলো পিত্তথলিতে জমে থাকা কঠিন পদার্থ। এটি সাধারণত কোলেস্টেরল, বিলিরুবিন, এবং লবণের কণা দিয়ে তৈরি হয়। পিত্তথলি হলো যকৃতের নিচে অবস্থিত একটি ছোট থলে, যা পিত্ত (Bile) জমা রাখে এবং হজম প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পিত্তথলির পাথর হতে পারে ছোট দানার মতো বা কখনো অনেক বড় আকারের।
পিত্তথলির পাথর কেন হয়?
পিত্তথলির পাথর তৈরির পেছনে কয়েকটি প্রধান কারণ রয়েছে:
- কোলেস্টেরলের আধিক্য: যখন পিত্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকে, তখন তা পিত্তথলিতে জমে পাথরে পরিণত হয়।
- বিলিরুবিনের অতিরিক্ততা: বিলিরুবিন হলো লোহিত রক্তকণিকা ভাঙনের সময় তৈরি হওয়া একটি উপাদান। যকৃতের রোগ বা রক্তক্ষরণের কারণে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
- পিত্তের সঞ্চালন সমস্যা: যদি পিত্ত থলিতে দীর্ঘ সময় ধরে পিত্ত জমে থাকে এবং এটি ঠিকভাবে প্রবাহিত না হয়, তাহলে পাথর তৈরি হতে পারে।
পিত্তথলির পাথরের প্রকারভেদ
- কোলেস্টেরল পাথর: এই পাথরগুলো সাধারণত হলুদ রঙের হয় এবং এটি কোলেস্টেরল জমে তৈরি হয়।
- পিগমেন্ট পাথর: এই ধরনের পাথর কালো বা গাঢ় বাদামি রঙের হয় এবং এটি বিলিরুবিনের উচ্চ মাত্রার কারণে সৃষ্টি হয়।
লক্ষণসমূহ
অনেক ক্ষেত্রে পিত্তথলির পাথর কোনো লক্ষণ সৃষ্টি করে না। তবে, কিছু পরিস্থিতিতে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে:
- তীব্র পেট ব্যথা: বিশেষত ডান দিকের উপরিভাগে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
- বমি বমি ভাব ও বমি: পিত্তথলির পাথর থাকলে হজমে সমস্যা হতে পারে।
- জ্বর ও কাঁপুনি: যদি পিত্তথলিতে সংক্রমণ হয়, তাহলে জ্বর দেখা দিতে পারে।
- হজমের গণ্ডগোল: মশলাযুক্ত খাবার খাওয়ার পর অস্বস্তি বা পেট ফাঁপা অনুভব হতে পারে।
- ত্বক ও চোখের হলুদাভ ভাব: এটি জন্ডিসের লক্ষণ এবং পিত্তনালির পথ বন্ধ হলে ঘটে।
ঝুঁকিপূর্ণ ফ্যাক্টর
- অতিরিক্ত ওজন: স্থূলতা পিত্তথলির পাথর তৈরির ঝুঁকি বাড়ায়।
- নারী লিঙ্গ: নারীদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়, বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে।
- ডায়াবেটিস: ডায়াবেটিস রোগীদের পিত্তথলির পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
- উচ্চ চর্বিযুক্ত খাদ্যাভ্যাস: দীর্ঘদিন ধরে ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়া পিত্তথলির পাথর তৈরির ঝুঁকি বাড়ায়।
জটিলতা
যদি পিত্তথলির পাথর ঠিকমতো চিকিৎসা করা না হয়, তবে এটি বেশ কিছু জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে, যেমন:
- পিত্তথলির প্রদাহ (Cholecystitis)
- পিত্তনালি ব্লকেজ (Bile Duct Obstruction)
- প্যানক্রিয়াটাইটিস (Pancreatitis)
- জন্ডিস
নির্ণয় পদ্ধতি
পিত্তথলির পাথর নির্ণয়ের জন্য নিম্নলিখিত পরীক্ষাগুলো করা হয়:
- আলট্রাসনোগ্রাফি: এটি পিত্তথলির পাথর শনাক্ত করার সবচেয়ে সাধারণ পদ্ধতি।
- সিটি স্ক্যান বা এমআরআই: যদি আলট্রাসনোগ্রাফি পর্যাপ্ত না হয়, তাহলে সিটি স্ক্যান বা এমআরআই ব্যবহার করা হয়।
- ব্লাড টেস্ট: রক্তে বিলিরুবিন, লিভার এনজাইম, এবং সাদা রক্তকণিকার মাত্রা পরীক্ষা করা হয়।
চিকিৎসা
পিত্তথলির পাথরের চিকিৎসা নির্ভর করে এর আকার, সংখ্যা, এবং উপসর্গের উপর। চিকিৎসার প্রধান পদ্ধতিগুলো হলো:
- ওষুধ: ছোট আকারের পাথরের ক্ষেত্রে কিছু ওষুধ ব্যবহার করে এটি গলিয়ে ফেলা সম্ভব।
- ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি: এটি সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতি, যেখানে ছোট কাটার মাধ্যমে পিত্তথলি অপসারণ করা হয়।
- ওপেন সার্জারি: বড় পাথর বা জটিলতার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
- এন্ডোস্কোপিক পদ্ধতি: পিত্তনালিতে পাথর আটকে থাকলে এন্ডোস্কোপ ব্যবহার করে তা সরানো হয়।
প্রতিরোধ
পিত্তথলির পাথর প্রতিরোধ করার জন্য কিছু সহজ অভ্যাস অনুসরণ করা যেতে পারে:
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: ফাইবার সমৃদ্ধ ও কম চর্বিযুক্ত খাবার খান।
- নিয়মিত ব্যায়াম: দৈনিক অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন।
- ওজন নিয়ন্ত্রণ: দ্রুত ওজন কমানোর চেষ্টা করবেন না; এটি পিত্তথলির পাথর তৈরির কারণ হতে পারে।
- প্রচুর পানি পান: পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা পিত্তকে তরল রাখতে সাহায্য করে।
সামেলা মেমোরিয়াল ক্লিনিকে পিত্তথলির চিকিৎসা
সামেলা মেমোরিয়াল ক্লিনিক আধুনিক সরঞ্জাম এবং অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে পিত্তথলির পাথরের উন্নত চিকিৎসা প্রদান করে। আমাদের ক্লিনিকে নিম্নলিখিত সেবাসমূহ পাওয়া যায়:
- নির্ভুল নির্ণয়ের জন্য উন্নত প্রযুক্তি
- সার্জারি ও পরবর্তী সেবার জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসা দল
- রোগীদের জন্য ব্যতিক্রমী যত্ন ও সহায়তা
পিত্তথলির পাথর একটি সাধারণ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা। এর প্রাথমিক লক্ষণগুলো শনাক্ত করে সময়মতো চিকিৎসা নিলে গুরুতর জটিলতা এড়ানো সম্ভব। সঠিক জীবনধারা অনুসরণ এবং পেশাদার চিকিৎসা নেওয়ার মাধ্যমে সুস্থ জীবন নিশ্চিত করা সম্ভব।
আপনার স্বাস্থ্যই আমাদের অগ্রাধিকার। পিত্তথলির সমস্যার জন্য আজই সামেলা মেমোরিয়াল ক্লিনিকের সাথে যোগাযোগ করুন।